তাবলীগ জামাতে দু গ্রুপে দ্বন্দ্ব কেন?
আজকে আমি আলোচনা করবো তাবলীগ জামাতের বিভক্তি নিয়ে
হজের পর বিশ্বের মুসলমানদের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত জানুয়ারির ১১ তারিখ থেকে শুরুর কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে, এবং নতুন তারিখও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাবলীগ জামাতের নেতা ভারতীয় মোহাম্মদ সাদ কান্দালভিকে নিয়ে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ঢাকার টঙ্গীতে এবার বিশ্ব ইজতেমা করার বিষয়টি সংকটে পড়ে। একটি গ্রুপ ১১ই জানুয়ারি থেকে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত ১5 নভেম্বর ২০১৮
তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে এই সময়ে ইজতেমা না করার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাবলীগ জামাতের কোন্দল মেটাতে দুই পক্ষের ছয়জন প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি ভারতে গিয়ে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করে সমাধান করবে বলে মি: খান আশা প্রকাশ করেছেন। "সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই তাবলীগ জামাত দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই এই ভাগাভাগির মধ্যে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, তাদের একসাথে করে তাবরীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা পূর্বের ন্যায় করার জন্য। সেজন্য ছয় সদস্যের একটা টিম করা হয়েছে। এরা ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় যাবে, সেখানে আলেম ওলামা এবং তাবলীগের নেতাদের সাথে আলোচনা করবে এবং বিতর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে আসবে। এরপর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা ইজতেমা করবে" - বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির মতবাদ নিয়ে তাবলীগ জামাতের দু'টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের প্রভাব গত বছরের ইজতেমাতেও পড়েছিল।
মি. কান্দালভি তাবলীগ জামাতে কিছু সংস্কারের কথা বলছেন যা এই আন্দোলনে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।
তিনি
বলছেন, 'ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়। এছাড়া মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত - যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।'
কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী, এবং আহলে সুন্নাত ওয়া'ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।
গত বছর মি. কান্দালভি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরোধী পক্ষের প্রতিবাদের মুখে তিনি ঢাকায় তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় কাকরাইল মসজিদ অবস্থান করে সেখান থেকেই দিল্লী ফেরত যান।
ভারতীয়
উপমহাদেশের
সুন্নি
মুসলমানদের
বৃহত্তম
সংগঠন তাবলীগ জামাতের
মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
আজ আবারও সামনে
চলে এসেছে।
নেতৃত্বের
কোন্দলে
গত নভেম্বর মাসে
বাংলাদেশে
তাবলীগের
কেন্দ্রস্থল
কাকরাইলে
দুই দল কর্মীর
মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও
ঘটেছে।
দক্ষিণ
এশিয়ায়
তাবলীগ
জামাতের
মূল কেন্দ্র হচ্ছে
দিল্লিতে।
সেখানকার
কেন্দ্রীয়
নেতৃত্ব
মাওলানা
সাদকে কেন্দ্র করে
বিভক্ত
হয়ে পড়েছেন অনেক
আগে।
এর
প্রভাবে
পাকিস্তান
এবং মালয়েশিয়াসহ এ অঞ্চলের
অন্যান্য
দেশগুলোতে
বিভক্তি
এসেছে বলে ঢাকায়
সংগঠনটির
নেতারা
বলছেন।
এখন
বাংলাদেশেও
সে বিভক্তি প্রকাশ্য
রূপ নিয়েছে। তাবলীগ
জামাতের
নেতারা
বলছেন, মাওলানা সাদ
বিভিন্ন
সময় যেসব মন্তব্য
করেছেন
সেগুলো
নিয়ে বাংলাদেশে তাবলীগ
জামাতের
নেতৃত্বের
মধ্যে মতবিরোধ চলছিল
প্রায়
দুই বছর ধরে।
বিরোধ
মেটানোর
জন্য ইসলামী চিন্তাবিদদের
নিয়ে সরকারের গঠিত
একটি উপদেষ্টা কমিটি
কাজ করছে। সে
উপদেষ্টা
কমিটির
অন্যতম
সদস্য মাওলানা মাহমুদ
হাসান।
তিনি
জানিয়েছেন,
এখনো বিরোধ মেটানো
সম্ভব হচ্ছে না।
তবে তারা চেষ্টা
অব্যাহত
রেখেছেন।
তাবলীগ
জামাতের
দুই অংশের একাধিক
নেতা বলেছেন, মাওলানা
সাদের মন্তব্যকে কেন্দ্র
করে বিরোধ ছড়িয়ে
পড়েছে
সারা বিশ্বের তাবলীগ
জামাতের
অনুসারীদের
মধ্যে।
ব্রিটেন,
আমেরিকা
এবং ইউরোপের দেশগুলোতে
তাবলীগ
জামাতের
নেতৃত্বের
বিভক্তি
দেখা দিয়েছে অনেকদিন
আগে।
তাদের
সংগঠনের
ভেতর থেকেও বিভিন্ন
দেশে বিরোধ মেটানোর
চেষ্টা
থাকলেও
তাতে এখনো ইতিবাচক
ফলাফল দেখা যাচ্ছে
না।
কুরআনে সূরা আনাম এর ১৫৯ নং আয়াতে বলেছেন
إِنَّ
الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ
يَفْعَلُونَ
|
যারা নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে, এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে সন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্তরয়েছে। তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদের কে জানাবেন। সূরা আনাম ১৫৯
وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَتَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আর তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা । আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন।তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে,এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডেরপাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেইআল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। সূরাআল-ইমরান আয়াত নং ১০৩
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়ে এটিই উৎকৃষ্ট। সূরা-নিসা ৫৯ (O ye
who believe! Obey Allah and obey the Messenger and those of you who have the
responsibility and authority among you. If there is a conflict between you, then
turn it back to Allah and the Messenger. If you truly believe in Allah and the
Hereafter. This is the best way of doing it and consequently it is better.
Surah Nisa 59)
এই যদি হয় আলেম উলামাদের অবস্থা তা হলে আমাদের অবস্থা কি হবে? আর নয় বিভক্তি আসুন ইসলামের পতাকা তলে, এবং বিভক্তি সমাধান করুন আলোচনার মাধ্যমে।
আর চাই না নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি, আর চাইনা বাই বাই হানা হানি।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন