আপনি শিয়া নাকি সুন্নি? আপনি হানাফি না শাফি? দীন নিয়ে মতভেদ করা কি কুফর? ইসলামে কোন তরিকা সঠিক?
উম্মার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা কুফর। সেই বিভেদ সৃষ্টির কাজ সবচেয়ে বেশি করা হয়েছে দীনের সূক্ষèাতিসূক্ষ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে উদ্ভাবিত মাসলা মাসায়েলের নামে। এই কাজটি করেছেন আলেম, ফকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ইমামগণ। দীনের বিষয়ে মতবিরোধকে তারা এত উৎসাহের সাথে করেছেন যে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার, তার মতামতের খÐনকেই নিজেদের এলেম প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছেন। অথচ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা আনাম এর ১৫৯ নং আয়াতে বলেছেন
إِنَّ الَّذِينَ
فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا
أَمْرُهُمْ إِلَى اللّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ
|
যারা নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে, এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে নিসন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্ত রয়েছে। তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদেরকে জানাবেন। সূরা আনাম ১৫৯
Video lecture. Dr. Zakir
Video lecture. Dr. Zakir
eZ©gv‡b
Avgv‡`i †`kRy‡i hZ IqvR gvnwdj †`wL Zvi AwaKvskB n‡jv GKwU agx©q gZev‡`i weiæ‡×
Av‡iKwU agx©q gZev‡`i cÖwZev`|
এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীনের সকল অনুসারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বক্তব্যেও সার নির্যাস হচ্ছেঃ এক আল্লাহকে ইলাহ বা রব মেনে নাও। আল্লাহর সত্তা গুণাবলী ক্ষমতা-ইখতিয়ার ও অধিকারে কাউকে শরীক করো না। আল্লাহ তাঁর রসূলদের ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে যে ব্যাপক মূলনীতি ও মৌল বিষয়ের শিক্ষা দিয়েছেন সে অনুযায়ী জীবন যাপন করো। এগুলোই আসল দীন হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে এবং এখনো যথার্থ দীন বলতে এগুলোকেই বুঝায়। জন্মের প্রথম দিন থেকে প্রত্যেক মানুষকে এ দীনই দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যুগের লোকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহয্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তি ও লালসার মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবে বা ভক্তির আতিশয্যে এ আসল দীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার ধর্মের ও ফেরকার সৃষ্টি করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যে সব নবী-রসূল এ দীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মহান মনীষী ও বুযর্গ এ দীনের প্রতিষ্ঠায় জীবনপাত করে গেছেন তাদের কারোর কারোর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে চলেছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানব সমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংর্ঘষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানব সমাজ দ্ব›দ্বমুখর দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে।
welqe¯‘¸‡jv n‡jv| নবীজি
নূরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান নাকি আরশে সমাসীন, আল্লাহর কি হাত পা আছে নাকি তিনি নিরাকার, তারাবি আট রাকাত নাকি বিশ রাকাত, টাই পরা জায়েজ নাকি না-জায়েজ, মিলাদের সময় কেয়াম করতে হবে নাকি বেকেয়াম হবে, সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন জোরে বলতে হবে নাকি আস্তে বলতে হবে ইত্যাদি নিতান্তই তাত্তি¡ক আর গুরুত্বহীন বিষয়। এগুলো একটাও দীনের মৌলিক বিষয়ের ধারের কাছেও নয়। অথচ এগুলো নিয়েই তারা প্রতিনিয়ত জাতিকে টুকরো টুকরো করে চলেছেন। অথচ আল্লাহ পবিত্র
কুরআনের বলেছেন
وَاعْتَصِمُواْ
بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَتَ اللّهِ
عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم
بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ
فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ
تَهْتَدُونَ
আর তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে
আল্লাহর রজ্জুকে
সুদৃঢ়ভাবে ধারণ
কর এবং
পরস্পর বিচ্ছিন্ন
হয়ো না
। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। সূরা আল-ইমরান আয়াত নং ১০৩
এর কারণ তারা আসলে এই দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী সেটাই নিশ্চিতরূপে জানেন না। তাদের কাছে এই দীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেশি বেশি আমল করে সওয়াব হাসিল করা। এজন্য তারা আমল করতে করতে খুঁটিনাটি আমল নিয়েও ফতোয়াবাজি করে চলেছেন। একটি গাড়ি যখন রাস্তা তেকে খাদে পড়ে যায় তখন প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সেই খাদ থেকে গাড়িটিকে উদ্ধার করা। সেটা না করে যদি আমরা গাড়িটির ভেঙে যাওয়া হেডলাইট মেরামত করতে শুরু করি সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে। কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হবে? এই দীনটি এসেছে কেন? ইসলামের উদ্দেশ্য কী? এই দীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর হুকুম প্রতিষ্টার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির জীবন থেকে সকল অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাত নির্মূল করে ন্যায় সুবিচার অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্টা করে ইবলিসের মোকাবেলায় আল্লাহকে বিজয়ী করা। ইবলিসের চাওয়া হচ্ছে অশান্তি, অবিচার, রক্তপাত। সেটা যতদিন সমাজে বিরাজ করবে ততদিন সে আল্লাহর সাথে কৃত চ্যালেঞ্জে বিজয়ী থাকবে। আল্লাহকে সেই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী রারা জন্য একটাই করণীয়, অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্টা করা। শান্তি আসবে কি করে? একটাই পথ-আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্টা। বর্তমানে সমগ্র পৃতিবীতে যে ন্যায় অশান্তি যুদ্ধ রক্তপাত বিরাজ করছে তার কারণ হলো, মানুষ এখন আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে ইবলিসের হুকুম অর্থাৎ নিজেদের মনগড়া হুকুম মেনে চলছে। তাদের অর্থনীতি চলছে সুদের ভিত্তিতে যা আল্লাহর দীনে সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহর হুকুম টিকে আছে ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্র অঙ্গনের সংকীর্ণ পরিসরে। অথচ উচিত ছিল রাষ্ট্রিয় ভাবে। ইসচামের সকল সামষ্টিক আমলগুলোকেও ব্যক্তিগত আমলে পরিণত করা হয়েছে। নামাজ, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সবই সামষ্টিক বিষয় কিন্তু এখন সেগুলোকে ব্যক্তিগত সওয়াব বা ফজিলতের মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছে। আর উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে যে, যত বেশি সম্ভ এই ব্যক্তিগত আমলগুলো করে যাওয়ার জন্য। চেষ্টা করা হচ্ছে নিখুঁত ভাবে ওজু করতে নিখুঁতভাবে ঘড়ি ধরে সেহরি ইফতার করতে, হিসাব করে তসবিহ গুনে জিকির করতে, নারীদেরকে যেন কাকপক্ষীয় দেখতে না পায় সেরকমভাবে পর্দা করতে। এসব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তর্কাতর্কি করে তারা জাতির মধ্যে শত সহ¯্র বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন সূরা আল আনাম এর ১৫৯ নাং আয়াতে “যারা নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে, এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে নিসন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্ত রয়েছে। তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদেরকে জানাবেন”। যারা ইসলাম কে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করছে তারা কি ইসলামে আছে তারা কি মুসলিম? দীন
কায়েমের ব্যাপারে তো মাজহাব ফেরকার মাসলা-মাসায়েল আর দন্ডবিধি সংক্রান্ত রায়, ফতোয়ার বিষয়গুলো আসবে দীন প্রতিষ্টার পরে যখন সেটা দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে তখন। কিন্তু দীন প্রতিষ্ঠার আগেই যদি মতভেদ করে জাতিকে টুকরো টুকরো করে তার শক্তি-সামর্থ্য বিনষ্ট করে ফেলি তাহলে দীনটাই তো প্রতিষ্ঠা হবে না। যারা মাজহাব মান্য করাকে ফরজ বলেন, ফেরকা মাজহাবের পক্ষে নানারকম যুক্তি দাঁড় করাতে চান তারা সেটা করতে পারেন কিন্তু তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই কাজ করে আপনারা আল্লাহর অভিপ্রায়ের বিপরিত করেছেন, পৃথিবীর বুকে ইবলিসকে বিজয়ী রেখে আপনাদের এই সব পাÐিত্য আল্লাহর সন্তে¦াষ উৎপাদন করবে না। মতভেদ রেখে আগে দীন প্রতিষ্ঠা করুন। আগে অন্তত একটা বিষয় সকলে একতাবদ্ধ হন যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর আরো হুকুম মানবো না। যেমন টি আল্লাহ পবিত্র কুর-আনের সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলেছেন যে “
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي
الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ
وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ
خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
|
|
হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য
করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব
ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে
আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে
থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট। সূরা আন নিসা-59
|
|
এবং নবীর (সাঃ) সাহাবীরা কেউ হানাফি, হাম্বলি, শিয়া, সুন্নী ছিলেন না। তারা ছিলেন শুধুই মো’মেন মুসলিম এছাড়ার ইসা (আ) ইবরাহীম (আ) সহ সকল নবী রাসূলই ছিলেন মুসলিম যেমন পবিত্র কুর-আনে বলেছেন
فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَى مِنْهُمُ الْكُفْرَ
قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللّهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللّهِ
آمَنَّا بِاللّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
Ò
যখন ঈসা তাদের মধ্যে অবাধ্যতা উপলদ্ধি করলেন, তখন বলেন, আল্লাহর পথে কারা আমাকে সাহায্য করবে? হাওয়ারীগণ বল্ল, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্য কারী আমরা আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম। ইমরান-৫২ Ó এবং
مَا كَانَ
إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلاَ نَصْرَانِيًّا وَلَكِن كَانَ حَنِيفًا مُّسْلِمًا
وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
ইবরাহীম (আ) ইহুদি ছিলেন না, খ্রিস্টানও ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ট মুসলিম, তিনি মুশরিকও ছিলেন না। সূরা আল ইমরান আয়াত নং-৬৭” । এইসব মতভেদ করে আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। সমগ্র দুনিয়াতে আমাদের কোনো সম্মান নেই, অধিকার নেই, আমাদের নিরাপত্তা নেই। সাড়ে ছয় কোটি মুসলমান আজ উদ্বাস্তÍ। একটার পর একটা দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশে পনেরো কোটি মুসলিম বাস করে। আমরাও তাদের টার্গেটের বাইরে নই। এখনও সময় আছে, যদি আমরা এই একটি সহজ কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে ইনশাল্লাহ আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করবেন। আরণ তিনি মোমেন মুসলিমের রক্ষাকর্তা। আমার কথার মধ্যে ভুল হলে কমেন্ট করে জানান। Video lecture. Dr. Zakir
1 টি মন্তব্য
Right
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন