মায়ের স্নেহ ও দাদার আদরে মোহাম্মদ৷
সিনা চাকের ঘটনার পর বিবি হালিমা ভীত হয়ে পড়লেন৷ তিনি শিশুকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এলেন৷ ছয় বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের স্নেহছায়ায় কাঠালেন৷ ( তালকিহুল ফুলুম পৃঃ 7 ইবনে হিশাম পৃঃ 168)
এদিকে হযরত আমিনা ইচ্ছে হলো যে তিনি পরলোকগত স্বামীর কবর জিয়ারত করবেন৷ পূত্র মোহাম্মদ দাসী উম্নে আয়মন এবং শ্বশুর আব্দুল মোতালেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় ৫০০কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন৷
এক মাস সেখানে অবস্থানের পর মক্কার পথে রওনা হলেন৷ মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি আবহাওয়া নামক জায়গায় এসে বিবি আমেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন৷ অসুখ বেড়ে চললো৷ অবশেষে আবহাওয়া ইন্তেকাল করলেন৷
আব্দুল মুত্তালিব পৌত্র কে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় পৌছলেন৷ পৌত্রের জন্য তার মনে ছিল ভালোবাসার উত্তাপ৷ অতীতের স্খৃতিতে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো৷ পিতৃমাতৃহীন পৌত্রকে তিনি যতটা ভালোবাসতেন এতো ভালোবাসা তার নিজ পুত্রকন্যা কারো জন্যই ছিলনা৷
ভাগ্যের লিখন বালক মুহাম্মাদকে সে অবস্থায় ছিলেন একান্ত নিঃসঙ্গ৷ কিন্তু আব্দুল মুত্তালিব তাকে নিঃসঙ্গ থাকতে দিতেন না৷ তিনি পৌত্রকে অন্য সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন এবং স্নেহ করতেন৷ ইবনে হিশাম লিখেছেন আব্দুল মুত্তালিবের জন্য কাবা ঘরের ছায়ায় বিছানা পেতে পেতে দেওয়া হতো৷ তার সন্তান সেই বিছানার চার দিকে বসতেন৷ কিন্তু মোহাম্মদ গেলে বিছানায় বসতেন৷ তিনি ছিলেন অল্পবয়স্ক শিশু৷ তার চাচারা তাকে বিছানা থেকে সরিয়ে দিতেন৷ কিন্তু আব্দুল মুত্তালিব বলতেন ওকে সরিয়ে দিও না৷ ওর মর্যাদা অসাধারণ বরং তাকে বিছানায় নিজের পাশে বসাতেন৷ শুধু নয় তিনি প্রিয় দৌহিত্র কে সবসময় নিজের কাছে রাখতেন৷ বালক মোহাম্মদের কাজকর্ম তাকে আনন্দ দিত৷
বয়স ৮ (আট) বছর দুই মাস দশ দিন হওয়ার পর তার দাদার স্নেহের ছায়ায় উঠে গেল৷ মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালেবকে ওসিয়ত করে গেলেন৷ তিনি যেন ভ্রাতুষ্পুত্রের বিশেষভাবে যত্ন নেন৷ উল্লেখ্য আবু তালেব এবং আব্দুল্লাহ ছিলেন একই মায়ের সন্তান৷ আবু তালেব ভ্রতুষ্পুত্রকে গভীর স্নেহ মমতার সাথে প্রতিপালন করেন৷ তাকে নিঃসন্তানের অন্তর্ভুক্ত করে নেন৷ বরং নিজ সন্তানের চেয়ে বেশি স্নেহ করতেন৷ ৪০ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ভ্রতুষ্পুত্রকে সহায়তা দেন৷ আবু তালেব পুত্রের স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই মানুষের সাথে শত্রুতা মিত্রতার বন্ধন স্থাপন করতেন৷
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন