আল্লাহর রহমতের সন্ধানে
আমি মক্কায় এলাম চারোদিকে দুর্ভিক্ষ অনাবৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয়েছে৷ কুরাইশ বংশের লোকেরা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে আবু তালেব এর কাছে আবেদন জানালো৷ আবু তালেব একটি বালক কে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন৷ বালকটিকে দেখে মেঘে ঢাকা সূর্য মনে হচ্ছিলো৷ আশে পাশে অন্য বালকও ছিল৷ আবুতালেব সেই বালক কে সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘরের সামনে গেলেন৷ বালকের পিঠ কাবার দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলেন বালক তার হাতের আঙুল রাখলো৷ আকাশে এক টুকরো মেঘ ও ছিল না, কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই সমগ্র আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল এবং মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল৷ শহর প্রান্তর সজীব উর্বর হয়ে গেলেন৷ পরবর্তীকালে আবু তালেব এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এই সুদর্শন তার চেহারা থেকে বৃষ্টির করোনা প্রত্যাশা করা হয় তিনি এতিমদের আশ্রয় এবং বিধবাদের রক্ষাকারী৷ ইবনে আসাকের জলাহামা ইবনে আরাফাতার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন৷
পাদ্রী বুহাইরাঃ
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স যখন 12 বছর মতান্তরে 12 বছর 2 মাস 10 দিন হল৷ আবু তালেব তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় রওনা হলেন৷ বসরায় পৌঁছার পর এক জায়গায় তাঁবু স্থাপন করলেন৷ সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী সেরা ছিল৷ সেই শহরের জারজিস নামে একজন পাদ্রী ছিলেন৷ তিনি বুহাইরা নামে পরিচিত ছিলেন৷ কাফেলা তাঁবু স্থাপনের পের বুহাইরা গীর্জা থেকে বের হয়ে কাফেলার লোকদের কাছে এলেন এবং তাদের মেহমানদারী করলেন৷ অথচ পাদ্রী বুহাইরা কখনো তার গির্জা থেকে বের হতেন না৷ তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনে ফেলেন এবং তার হাতে হাত ধরে বলেন তিনি সাইদুল আমিন আল্লাহ তায়ালা রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরণ করেছেন৷ আবু তালেব বুহাইরাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি এটা কিভাবে বুঝলেন৷ তিনি বললেন আপনারা এই এলাকায় আসার পরে এই বালকের সম্পান্নে এখানকার সব গাছপালা এবং পাথর সেজদায় নত হয়েছে৷ এরা নবী ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করে না৷ তাছাড়া আমি তাকে মোহরে নবুয়তে দ্বারা আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি৷ তার কাঁধের নিচে নরম হাড়ের পাশে একটি "সেব" ফলের মত মজবুত রয়েছে৷ আমরা তার উল্লেখ, আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থে দেখেছি৷
হিলফুল ফুজুল
ফুজ্জায়ের যুদ্ধের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত জিলকদ মাসে হেলফুল ফুযুল সংঘটিত হয়৷ কয়েকটি গোত্র যেমন কোরায়শ অথাৎ বনি হীশেম, বনি মোত্তালেব, বনি আসাদ ইবনে আবদুল ওযবা, বনি যোহরা, ইবনে কেলাব এবং বনু তাইম ইবনে মোররা এর ব্যবস্থা করেন৷ এরা সবাই আব্দুল্লাহ ইবনে জুদআন তাইমিয়া ঘরে একত্রিত হন৷ এরা বয়স এবং আভিজাত্যে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়৷ এরা পরস্পর এই মর্মে অঙ্গীকার করলেন যে মক্কা সংঘটিত যে কোন প্রকার জুলুম প্রতিরোধ করবেন৷ হোক মক্কার আদিবাসী বা বাইরের কেউ অত্যাচারিত হলে প্রতিকার করে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ এ সমাবেশে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উপস্থিত ছিলেন৷ নবুয়াত পাওয়ার পর এই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন৷ আমি আব্দুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে এমন চুক্তিতে শরিক ছিলাম যার বিনিময়ে লাল উটও আমার পছন্দ নয়৷ ইসলামী যুগে সেই চুক্তির জন্য যদি আমাকে ডাকা হতো তবে আমি অবশ্যই হাজির হতাম৷
সংগ্রামী জীবন যাপন৷
তরুণ বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দিষ্ট কোন কাজ ছিল না৷ তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে তিনি বকরি চরাতেন৷ সেগুলো ছিলো বনি সা'দ গোত্রের কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কার বিভিন্ন লোকের বকরিও তিনি চরাতেন৷ 25 বছর বয়সে তিনি হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে সিরিয়া সফর করেন৷ ইবনে ইসাক বর্ণনা করেছেন খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ একজন অভিজাত ও ধনবতী মহিলা ছিলেন৷ তিনি বিভিন্ন লোককে দিয়ে পণ্য কিনতে এবং সেসব পণ্য বিক্রি করাতেন৷ লাবের একটা অংশ গ্রহণ করতেন৷ সমগ্র কোরায়শ গোত্রই ব্যবসা করতো৷ বিবি খাদিজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততা সচ্চরিত্রতা এবং নম্রতার কথা শুনে তাকে ব্যবসায়ে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন৷ তিনি তার ক্রীতদাস মায়াছীরাকে কে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেন৷ খাদিজা একথাও বললেন যে অন্য লোকদের তিনি যে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দেবেন৷ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করলেন৷
1 টি মন্তব্য
Well
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন