Header Ads

নিজ ঘরে নিজে পরদেশী

তার পরিচ্ছন্ন অনমনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে স্বজাতীয়দের সাথে তাঁর মানসিক ও চিন্তার দূরত্ব অনেক বেড়ে গেলো৷ অবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসঙ্গ প্রিয় হয়ে উঠলেন৷  এ সময় রেসালাতের ছায়ায় হেরাগুহায় অভ্যন্তরে সময় কাটাতে লাগলেন৷ এটি একটি ছোট গুহা এর দৈর্ঘ্য চার গজ এবং প্রস্থ পৌনে দুই গজ৷ নীচ দিক গভীর নয় ছোট একটি পাথরের পাশে ওপরের প্রান্তরের সঙ্গমস্থলে এ গুহা অবস্থিত৷ এ খানে রাসূলুল্লাহ পথচারী ও মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং বাকি সময় আল্লাহর এবাদতে কাটাতেন৷
জগতের দৃশ্যমান এবং এর পেছনে কার্যকর কুদরতের কারিশমা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন৷ মূর্তিপূজা এবং নোংরা জীবনযাপন দেখে তিনি শান্তি পেতেন না৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই নিঃসঙ্গতা ছিল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হেকমতের একটি অংশবিশেষ৷ এমনই করে আল্লাহ তাআলা তাকে ভবিষ্যতের গুরুদায়িত্বের  জন্য তৈরি করছিলেন৷ আধ্যাত্মিক রূহানী সফরে তিনি সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করতেন যাতে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন৷ চল্লিশ বছর বয়স হচ্ছে মানুষের পূর্ণতার ও পরিপক্কতার বয়স পয়গম্বররা   এই বয়সেই ওহী লাভ করে থাকেন৷ একদিন হযরত জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসেন এবং তাকে বলেন পড়ো৷ নবীজি  বললেন আমি তো পড়তে জানিনা৷ ফেরেশতা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন৷  তিনি বলেন আমার সব শক্তি যেন নিংড়ে নেয়া হলো৷ এরপর ফেরেশতা তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন পড় ৷ তিনি বললেন আমি তো পড়তে জানিনা৷  পুনরায় ফেরেশতা আমাকে বুকে জড়িয়ে চাপ দিলেন এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন পড়ো তৃতীয়বার তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন৷ "ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক" পড়ো প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন৷  এই আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর প্রিয় নবী ঘরে এলেন৷ তার বুক ধুকধুক করছিল৷  খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ কে বললেন৷ আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও৷
বিবি খাদিজা প্রিয়নবীকে চাদর জড়িয়ে শুয়ে দিলেন৷ তার ভয় কেটে গেল এরপর বিবি খাদিজাকে সব কথা খুলে বললেন৷ আমার কি হয়েছে নিজের জীবনে আমি আশঙ্কা করছি৷ বিবি খাদিজা তাকে অভয় দিয়ে বললেন৷ আল্লাহ তাআলা আপনাকে অপমান করবেন না৷ বিবি খাদিজা এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তার আপন চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ইবনে আব্দুল ওযযার কাছে নিয়ে গেলেন৷  ওরাকা আইয়ামে জালিয়াতে ইসায়ী ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন৷ তিনি হিব্রু ভাষায় লিখতেন জানতেন৷ যতটা আল্লাহতালা তৌফিক দিতেন৷ হিব্রু ভাষায় ততটা ইঞ্জিল তিনি লিখতেন৷ সে সময় তিনি ছিলেন বয়সের ভারে বৃদ্ধ এবং দৃষ্টিহীন৷ বিবি খাদিজা বলেন ভাইজান আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন ৷ ওরা বললেন ভাতিজা তুমি কি দেখেছ৷ মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব খুলে বললেন৷ সব শুনে ওরাকা বললেন৷ তিনি সেই দুধ-চিনি হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসেছিলেন৷ হায়, যদি আমি সেই সময় বেঁচে থাকতাম যখন তোমার কওম তোমাকে বের করে দেবে৷  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবাক হয়ে বললেন৷ তবে কি আমার কওম আমাকে সত্যি সত্যি বের করে দেবে?ওরাকা বললেন তুমি যে ধরনের বাণী লাভ করেছে৷ এ ধরনের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে৷ যদি আমি বেঁচে থাকি তবে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো৷ এর কিছুকাল পরই ইন্তিকাল করেন৷  এরপর হঠাৎ ওহীর আগমন বন্ধ হয়ে যায় ৷ হাফেজ ইবনে হাজার লিখেছেন কিছুকাল ওহী স্থগিত ছিল৷  আর স্থগিত থাকার কারণ ছিল এই যে, তিনি যে ভয় পেয়েছিলেন সেই ভয় যেন কেটে যায় এবং পুনরায় ওহী প্রাপ্তির আগ্রহ এবং প্রতীক্ষা যেন তার মনে জাগে৷ বিস্ময়ের ঘোর কেটে যাওয়ার পর বাস্তব অবস্থা তার সামনে প্রকাশ পেল৷ তিনি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন যে, তিনি আল্লাহর নবী হয়েছেন৷ তিনি আরো বুঝতে সক্ষম হলেন যে, কাছে যিনি এসেছেন তিনি ওহীর বহনকারী আসমানী সংবাদবাহক৷ এর পরে আলোচনা করব ওহীর প্রকারভেদ নিয়ে?
RBFried থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.