Header Ads

আপনি জানেন কি কাবা ঘরে কিভাবে মূর্তির প্রচলন শুরু হলো ?

 

হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লাম এর দাওয়াত ও তাবলীগের ফলে আরবের সাধারণ মানুষ দিনে ইব্রাহিমের অনুসারী ছিল, তাই তারা একমাত্র আল্লাহর এবাদত করত এবং তাওহীদ একাত্মবাদ বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু যত দিন যেতে লাগল তারা দ্বীনি শিক্ষা ভুলে যেতে লাগলো তবুও তাদের মধ্যে তাওহীদের আলো এবং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম এর দিনের কিছু নিদর্শন অবশিষ্ট ছিল ।  ইতিমধ্যে বনু খোযায়া গোত্রের সর্দার আমর ইবনে লুহাই দৃশ্যপটে আসে। ছোটবেলা থেকে এই লোকটি পুণ্যময় পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছিল, ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল অসামান্য সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসার চোখে দেখে এবং নেতৃত্বস্থানীয় ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ মনে করে তার অনুসরণ করে এবং সাধারন মানুষ তাকে খুব ভালবাসে। 

একপর্যায়ে এই লোকটি সিরিয়া সফর করে

সেখানে মূর্তি পূজা হচ্ছে দেখে সে মনে করল এটা আসলে একটা ভাল কাজ, কেননা সিরিয়ায় অনেক নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে। কাজেই সিরিয়ার জনগণ যা করছে সেটা নিশ্চয়ই ভালো এবং পুণ্যের কাজ হবে । এরূপ চিন্তা করে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে সে হোবল নামের মূর্তিটি নিয়ে এসে তা কাবা ঘরের ভেতর স্থাপন করে।  এরপর সে মক্কাবাসীদের সেই মূর্তি পূজার মাধ্যমে আল্লাহর পথে শিরক করার আহ্বান জানায়। মক্কার লোকেরা তার ডাকে সাড়া দেয়, মক্কাবাসীকে মূর্তি পূজা করতে দেখে হেজাযবাসী তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে।  কেননা মক্কার কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং হেরেমের বাসিন্দা। সুত্র ( মোখতাছার সীরাতুর রসূল- শেখ মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব নজদী পৃ.১২)

এমনি করে আরবের মূর্তি পূজার সূচনা হয়। হোবল’ ছাড়াও আরবের প্রাচীনতম মূর্তি ছিল মানাত।  এই মুহূর্তে লোহিত সাগরের উপকূল কোদায়দ এলাকার মোশাল্লাল  নামক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর তায়েফে লাত নামে একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।  নাখলা  প্রান্তরে ”ওযযা” মূতি স্থাপিত হয়।  এই তিনটি ছিল আরবের সবচেয়ে বড় মূর্তি। এসব মূর্তির অনুসরণে হেজাজের সবর্ত্র শেরেকের আধিক্য এবং মূর্তি স্থাপনের হিড়িক পড়ে যায়।  বলা হয়ে থাকে,  এক জিন আমর ইবনে লুহাইয়ের অনুসারে ছিল। সে আমরকে জানালো, নূহের জাতির মূর্তি ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক  এবং নাছর জেদ্দায় পতিত রয়েছে। এই খবর জানার পর আমরা এগিয়ে মাটি খুঁড়ে বের করে তেহমায় নিয়ে নিয়ে আসে এবং হজ্ব মউসুমে ওসব মূর্তি বিভিন্ন গোত্রের হাতে তুলে দেয়। গোত্রগুলো  এসব মূর্তি নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। এমনভাবে প্রত্যেক গোত্র এবং পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক ঘরে ঘরে একটি মূর্তি স্থাপিত হয় ।

 

অতপর পৌত্তলিকরা কাবাঘর ও মূর্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে ফেলে।  মক্কা বিজয়ের সময় কাবা ঘরে 360 টি মূর্তি ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে এইসব মূর্তি ভাঙ্গেন।  তিনি ছুরি  দিয়ে কোন মূর্তি কে গুঁতো দিতেন, সাথে সাথে সেটি নিচে পড়ে যেত, এরপর তার নির্দেশে সব মূর্তি কাবা ঘর থেকে বের করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মোটকথা শেরেক এবং মূর্তিপূজা জাহেলিয়া যুগের মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় কাজ ছিল।  

মূর্তিপূজায় নিমজ্জিত হয়েও জাহেলিয়া যুগের লোকেরা গর্বভরে নিজেদের হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম এর দ্বীনের উপর অবস্থিত বলে মনে করত।জাহেলিয়া যুগের পৌত্তলিকদের মধ্যে মূর্তিপূজার বিশেষ কিছু নিয়ম প্রচলিত ছিল।  এর অধিকাংশ ছিল আমর ইবনে লুহাই এর-আবিষ্কার । লোকেরা আমর ইবনে লুহাই এর আবিষ্কার  সমূহকে ইব্রাহিমের পরিবর্তন নয় ,বরং এসব কে তারা মনে করত বেদাতে হাসানা।

নিচে মূর্তিপূজার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রেওয়াজ প্রথা তুলে ধরা হচ্ছে -

এক, আইমে জাহেলিয়াতের পুত্তলিকা মূর্তির সামনে নিবেদিত চিত্তে বস্তু এবং তাদের কাছে আশ্রয় চাই। তাদের ডাকতো এবং প্রয়োজন পূরণ মুশকিল আসান সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের কাছে সাহায্য চাই তো।  তারা বিশ্বাস করতো মূর্তির আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করে দেবে।

দুই, জাহেলিয়াত যুগের মূর্তি পূজারীরা মূর্তিগুলোর উদ্দেশ্যে হজের তাওয়াফ এর মত তাওয়াব করত। তাদের সামনে অনুনয় বিনয়  সহকারে নিজেদের পেশ করতো এবং তাদের সিজদা করতে।

তিন,  মূর্তি গুলোর জন্য কুরবানী ও নজরানা পেশ করা হতো।  কখনো কখনো মূর্তির আস্তানায় নিয়ে কুরবানীর পশু জবাই করা হতো।  তবে সেটা করা হতো মূর্তির নামে। জবায়ের ওভই প্রকার কথা কোরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন।  এরশাদ হচ্ছে “সেই পশু হারাম যা মূর্তিপূজার বেদীতে জবাই করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন ”ওই সব পশুর গোশত খেয়ো না যার ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি অর্থাৎ গাইরুল্লাহ্র নামে জবাই করা হয়েছে এমন পশুর গোশত আহার করো না ৷

চার, মূর্তির সন্তুষ্টি লাভের একটা উপায় ছিল যে পত্তলিক রা তাদের পানাহারের জিনিস উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ জন্তুর একাংশ মূর্তির   জন্য পৃথক করে রাখত। মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা আল্লাহর জন্য একটা অংশ রাখত। পরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহর জন্য রাখা অংশ মূর্তির কাছে পেশ করত। কিন্তু মূর্তির জন্য রাখা অংশ কোন অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে পেশ করত না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন আল্লাহ যেসব শস্য ও পশু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে থেকে তারা আল্লাহর জন্য এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণামতে বলে এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবদেবীদের কাছে পৌঁছায়, তারা যা মীমাংসা করে তা বড়ই নিকৃষ্ট। 

কোন মন্তব্য নেই

RBFried থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.