Header Ads

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম । ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া।

বর্তমানে এই ভার্চুয়াল জগত মানুষের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় ড্রাইভিং লাইসেন্স আগের মতো এতো ঝামেলা পোহাতে হয় না ঘরে বসেই যেকোনো ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অতি সহজেই আবেদন করতে পারে। একজন চালক যতই দক্ষ হোক না কেন তার কাছে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে তাহলে তাকে চালক হিসেবে গণ্য করা যায় না, বর্তমানে ছোট থেকে বড় বাংলাদেশের গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের ব্যবহার তো অতি মামুলি। তা একজন চালক কে ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই করতে হবে।তাই আমরা এখন জানব কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। আর আবেদন করার জন্য কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। লাইসেন্স করতে খরচ কত পড়বে।লাইসেন্স কিভাবে নবায়ন করতে হবে। স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলে কিভাবে পুনরায় তুলতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স কি?

ড্রাইভিং শব্দের অর্থ হচ্ছে চালানো আর লাইসেন্স শব্দের অর্থ হচ্ছে অনুমতি পত্র সুতরাং ড্রাইভিং লাইসেন্স শব্দের অর্থ হচ্ছে মোটর গাড়ি চালানোর অনুমতি পত্র।মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩এর ধারা ৩ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে গাড়ি চালানোর জন্য giving authority  অর্থাৎ ক্ষমতা প্রদান করে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই প্রকারঃ পেশাদার এবং অপেশাদারঃ

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ

ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে একজন চালক নিজের গাড়ি থেকে শুরু করে বেতনভুক্ত হয়ে কোন ব্যক্তি বা কোন কোম্পানির গাড়ি চালাতে পারবেঃএই লাইসেন্সের এর আয়ুকাল পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পরে আবার নির্ধারিত ফি এবং পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়?

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ

যে লাইসেন্স এর মাধ্যমে কোন চালক বেতনভুক্ত কর্মচারী না হয়ে,নিজের হালকা গাড়ি চালাতে পারবে এই লাইসেন্সের আয়ুকাল হয়ে থাকে 10 বছর। সাধারণত মোটর সাইকেল এবং হালকা যান চালানোর চালকগণ এই অপেশাদার লাইসেন্স করে থাকে। এই লাইসেন্স এর মাধ্যমে মাঝারি বা ভারী যানবাহন চালানো যায় না।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগ্যতাঃ

সরাসরি বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় না ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে প্রথমে নিতে হবে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদনকারীর নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস। এবং বয়স অপেশাদার এর ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং পেশাদার এর ক্ষেত্রে ২১ বছর। এছাড়াও মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনঃ

একজন গ্রাহক কে প্রথমে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ বিআরটিএ'র নিজস্ব ওয়েবসাইট এই ঠিকানায় https://bsp.brta.gov.bd ফরম পূরণ করতে হবে। সঠিকভাবে ফরম পূরণের পর আবেদনপত্রটি কে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর দুই থেকে তিন মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। যারা পূর্বে থেকেই গাড়ি চালাতে পারেন তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে না । নির্ধারিত তারিখ ও সময় এবং নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক, এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স সাথে আনতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যা করণীয়

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ.

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে।
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট এর ফটোকপি জমা দিতে হবে.
৪। প্রথম ক্যাটাগরিতে ৩৪৫ টাকা ও দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ৫১৮ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংকের তালিকা এই ঠিকানায় পাওয়া যাবে। (bsp.brta.gov.bd)
৫। সদ্যতোলা তিন কপি স্ট্যাম্প সাইজ এবং এককপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে।

উক্ত ফরম পূরণের পর ব্যাংক রিসিপ্ট সহ বিআরটিএ নির্ধারিত অফিসে জমা দিতে হবে। লিখিত মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই পরীক্ষা সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস পরপর হয়ে থাকে।(যদি কেউ ইমারজেন্সি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চায় তবে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষা দেওয়া যায়) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কেবল স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।.
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধনের সনদ পত্র বা পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
৪। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন এর কপি।
৫। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ।
৬। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১৪৩৮ টাকা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২৩০০ টাকা বিআরটিএ কতৃক নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
৭। এরপর সব কিছু এক করে বিআরটিএ নির্ধারিত অফিসে জমা দিতে হবে এবং রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
৮। বায়োমেট্রিক দেওয়ার পরে মূল লাইসেন্স পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একটি টেম্পোরারি লাইসেন্স পাওয়া যাবে যার মাধ্যমে বৈধভাবে গাড়ি চালানো যাবে।.
৯। মূল লাইসেন্স তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে দেবে, তখন বিআরটি অফিস থেকে মূল লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রকারভেদ

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তিন প্রকারঃ

লাইট বা হালকাঃ যে গাড়ির ওজন ২৫০ কেজির নিচে। এই ধরনের ছলনা করার জন্য হালকা বা লাইট লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়, এই ধরনের চালকের বয়স কমপক্ষে 20 বছর হতে হবে।  

মধ্যম বা মাঝারিঃ গাড়ির ওজন ২৫০ থেকে ৬৫০ কেজি পর্যন্ত। হলে গাড়ি চালনা করার জন্য মধ্যম বা মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়।এক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারী বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে। 

হেভি বা ভারীঃ গাড়ির ওজন ৬৫০ কেজি উপরে হলে গাড়ি চালনা করার জন্য হেভি বা ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়।এক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স দাড়ির বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হয়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতিঃ

প্রত্যেক ড্রাইভিং লাইসেন্স  এর নির্ধারিত একটি মেয়াদ থাকে।  মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে লাইসেন্স টিকে নবায়ন করতে হয়। কারণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করে গাড়ি ড্রাইভ করলে বেআইনি হিসেবে গণ্য হয়। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই সেটিকে নবায়ন করে নিতে হবে। তবে নবায়নের ক্ষেত্রে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কিছু ভিন্নতা রয়েছে।

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রেঃ

গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি (মেয়াদ উত্তীর্ণ আর 15 দিনের মধ্যে হলে ২১৮৫টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৫ দিন পরে হলে প্রতি বছরের জন্য ২০০ টাকা জরিমানা সহ)জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্তি কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে,একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়।স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট সম্পন্ন হলে গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রেঃ

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারী ব্যক্তিকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়, ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, নির্ধারিত ফি (মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৩২৩ টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ দিনের পরে হলে প্রতি বছরের জন্য ২০০ টাকা জরিমানা সহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ এর জন্য গ্রাহককে বিআরটিএ নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়। স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট সম্পন্ন হলে গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই

RBFried থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.