চোখ উঠা।ডাক্তারি পরিভাষায় কনজাংটিভাইটিস কি?
চোখ উঠা বা ডাক্তারি পরিভাষায় কনজাংটিভাইটিস হলো চোখের এক ধরনের সংক্রমণ।
👀কখন আমাদেরকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
👀এমন সব প্রশ্ন নিয়েই আজকের আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
👀আমাদের চোখ উঠে কেন? এবং তা কিভাবে ছড়ায়?
চোখ উঠা বেশ ছোঁয়াচে রোগ, চোখ উঠেছে এমন ব্যক্তির ব্যবহার্য চশমা, রুমাল, তোয়ালে ব্যবহার্য গামছা বালিশ টিস্যু এবং কি প্রসাধনী সামগ্রীর মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় তাই আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি না থাকাই শ্রেয়। এছাড়াও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন চোখ ওঠার বড় কারণ।
ডাক্তারি বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত তিনটি কারণে চোখ উঠতে পারে। সেগুলো হলোঃ-
২। ভাইরাস।
৩। এলার্জি।
চোখে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণকে ইনফেক্টিভ কনজাংটিভাইটিস বলে । ভাইরাসের সংক্রমণ হলে চোখ ফুলে যায় এবং অনর্গল পানি পড়তে থাকে। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে হলুদ বা সবুজ রং এর আঠালো পুঁজ জমবে। যেকোনো ধরনের ফুলের রেণু, পশু পাখির পালক ধুলাবালি এলার্জি থাকলে তার প্রতিক্রিয়ার কারণে চোখ উঠতে পারে। একে এলার্জি কনজাংটিভাইটিস বলে । বিভিন্ন পদার্থের সংস্পর্শে চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। যেমন শ্যাম্পু, সাবান বা পুকুরের ক্লোরিন যুক্ত পানি, ধুয়া এমনকি চোখের আলগা পাপড়ি বা ল্যাশ এক্সটেনশন এ ব্যবহৃত কেমিক্যাল আঠার ঘষায় চোখ উঠতে পারে। এটিকে ইরিটেন্ট কনজাংটিভাইটিস ও বলা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সংক্রমিত কন্টাক লেন্স, রাসায়নিক, চশমা, বা আই ঢপের প্রভাবেও চোখ উঠতে পারে। আবার যেমন বিভিন্ন যৌনবাহিত সংক্রমণ। গনোরিয়া ও ক্যামডিয়ার প্রভাবেও চোখ ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
চোখ ওঠার লক্ষণঃ
চোখের সাদা অংশ লাল বা টকটকে লাল দেখাবে। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে অন্য চোখে তা ছড়িয়ে পড়ে। চোখে চুলকানি জালাপোড়া বা খচখচানি কাটা কাটা চোখের ভিতরে কিছু আছে এমন অনুভূতি তৈরি হয়। চোখ থেকে অনর্গল পানি পড়তে থাকে। চোখের পাতায় পুঁজ জমে এবং পাপড়ি আঠার মতো লেগে থাকে। বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠার পরে চোখ আঠার মতো লেগে যাবে। চোখের পাতা লাল হয়ে ফুলে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে।
বাড়িতে বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা কিভাবে নেবেন?
এই ধরনের অসস্তি এড়াতে আপনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। কিছু পরিষ্কার তুলো বা সাদা রঙের সুতি কাপড় পরিষ্কার গরম পানিতে ডুবিয়ে চেপে নিয়ে আলতো হাতে চোখের পাতা ও পাপড়ি পরিষ্কার করতে হবে দিনে কয়েকবার। দুটো চোখের জন্য আলাদা আলাদা কাপড় ও পানির পাত্র ব্যবহার করা উত্তম। গরম সেক দেওয়ার কয়েক মিনিট পর ঠান্ডা বা বরফ পানিতে কাপড় বা তুলো ভিজিয়ে শেখ দেওয়া যেতে পারে। এ সময় চোখের চাপ পড়ে এমন কাজ করা যাবে না। যেমন বেশিক্ষণ মোবাইল কম্পিউটার বা ছোট লেখা পড়া ইত্যাদি।
কখন আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন?
চোখ ওঠার ক্ষেত্রে সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। কারণ এটি 7 থেকে 10 দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। চোখ ওঠার উপসর্গ দুই সপ্তাহ পরেও ঠিক না হলে। চোখে বারবার ময়লা জমলে। শিশুর চোখ লাল হয়ে গেলে বিশেষ করে শিশুর বয়স যদি এক মাসের কম হয় তাহলে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চোখ চুলকানোর সাথেসাথে চোখে ব্যথা অনুভূত হলে। চোখে ভীষণ ব্যথা সহ মাথা ব্যথা এবং অসুস্থ হলে ও চোখ জখম হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আলোর দিকে তাকালে চোখে ব্যথা করলে। দৃষ্টিতে যদি কোনো ধরনের পরিবর্তন আসে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যেমন কাঁপাকাঁপা রেখা বা বিদ্যুতের ঝলকানি মত অনুভূত হলে।
চোখ ওঠার চিকিৎসা কেমন হবে তা নির্ভর করবে চোখ ওঠার কারণের ওপর।
ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারণে চোখ উঠলে। চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক, আই ড্রপ বা মলম দিতে পারে। ভাইরাস বা এলার্জির কারণে চোখ উঠলে অ্যান্টি-হিস্টামিন বা অ্যান্টি অ্যালার্জি ঔষধ যেমন আই ড্রপ বা মলম দিতে পারেন। একজন রোগীর যেসব এলার্জি আছে এগুলোর কারণ এড়িয়ে চললে সবচেয়ে ভালো হয়।
চোখ উঠলে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না?
এই সময় চোখে কোন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। এলার্জি এড়াতে কালো চশমা বা সানগ্লাস এর মাধ্যমে চোখ ঢেকে রাখা যেতে পারে। কোন আইড্রপ এর মেয়াদ এক বা দুই বৎসর থাকলেও একবারের মুখ খুললে 28 দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। চোখ উঠলেই ইস্কুল কলেজ এমনকি কাজে যাওয়া বন্ধ করতে হবে এমনটি নয়। তবে স্কুলে অনেক লোকের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে । কিছুদিন শিশুকে আলাদা রাখাই উত্তম। এছাড়াও তাদের পণ্যের সংস্পর্শে কাজ করতে হয় তাদেরও এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা ভালো। প্রবীণ ও শিশুদের মধ্যে এরূপ উঠার সম্ভাবনা বেশি। ডায়াবেটিস বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এমন রোগ হলেও চোখ ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন